ঢাকাFriday , 22 July 2016
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কেশবপুরের ক্লিনিক গুলো এখন মৃত্যু ফাঁদ


July 22, 2016 2:10 pm
Link Copied!

কেশবপুর মাতৃমঙ্গল

কেশবপুর মাতৃমঙ্গল

Matri-01

বিশেষ সংবাদদাতা, কেশবপুর, ২২ জুলাই।
কেশবপুরের ক্লিনিক গুলো এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ভুল অপারেশনের শিকার হয়ে দিনদিন নিহতের তালিকা বেড়েই চলেছে। দক্ষ চিকিৎসক আর মান সম্মত ক্লিনিকের অভাবে কেশবপুরের জনগন ক্লিনিক মালিকেদর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে আর  এসব ক্লিনিকের মালিকরা অর্থের পাহাড় গড়ছে। অবাধে তারা ক্লিনিক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ এই মৃত্যুপুরীতে অপচিকিৎসার কবলে পড়ে জীবন দিতে হয়েছে কেশবপুরের নারায়নপুর গ্রামের জেসমিন খাতুন  নামের এক গৃহবধুকে।
নিহত গৃহবধু জেসমিন খাতুনের স্বামী রেজাউল ইসলাম জানান, একমাস আগে ১৩ জুন তার গর্ভবতী স্ত্রী জেসমিন খাতুনকে (৩০) কেশবপুর মাতৃমঙ্গল ক্লিনিকে নিয়ে যান। ক্লিনিকের মালিক ডি এম এফ ডাক্তার নজরুল ইসলাম পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানান, বাচ্চা ও মা দুইজনই ভাল আছে। পরের দিন রেজাউল ইসলামের অনুপস্থিতিতে ডাক্তার নজরুল ইসলাম জেসমিনের সিজার করে মরা বাচ্চা বের করেন। রেজাউল ইসলাম ক্ষুব্ধ হলেও স্ত্রীকে কোন রকম সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যান। কিন্তু দিনদিন জেসমিনের যন্ত্রনা বাড়তে থাকে এবং অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। গত রবিবার জেসমিনকে পূনরায় কেশবপুরের অপর ক্লিনিক কেশবপুর হেলথ কেয়ার হসপিটালের মালিক ডাক্তার শাসছুজ্জামানের নিকট নিয়ে যান। তিনি আলট্রাসোনোগ্রাম করে জানান, জেসমিনের পেটের ভেতর কিছু একটা রয়ে গেছে এবং ইনফেকশন (ঘা) হয়ে গেছে। আবার অপারেশন করতে হবে। ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি করে তিনি তার ক্লিনিকে অপারেশন করে জেসমিনের পেটের ভেতর থেকে সুতাসহ আরও কিছু বের করেন। অপারেশনের পরের দিন সোমবার জেসমিনের অবস্থা মারাতœক খারাপ হলে ডাক্তার শামছুজ্জামান তাকে খুলনা গাজী মেডিকেলে রেফার করেন এবং ওই দিনই জেসমিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ডাক্তার শামছুজ্জামান জানান, ওই রোগির জরায়ুতে খুব বেশী পরিমানে ইনফেকশন ছিলো। আমার এখানে গাইনী ডাক্তার আমেনা জান্নাত পিয়া অপারেশন করে যতটা সম্ভব ঠিক করার চেষ্টা করেন। পরে রোগির কিডনি ও লান্স ঠিকমতো কাজ করেনি। ফলে তাকে রেফার করার হয় গাজী মেডিকেলে। ডাক্তার নজরুল ইসলাম জানান, আমার কাছে রোগি আনলে রোগির অবস্থা দেখে প্রথমে তাদের সিজার না করার পরামশ্য দেয়া হয় কিন্তু তাদের অনুরোধে এক পর্যায়ে ডাক্তার বরকত আলীকে দিয়ে সিজার করিয়ে মৃত বাচ্চা বের করা হয়। এরপর রোগি সম্পূন সুস্থ অবস্থায় বাড়ি পাঠানো হয়।
জেসমিনের নিহতের খবরে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে পরের দিন মঙ্গলবার নারায়নপুর সড়ক অবোরোধ করে। বিক্ষুব্ধ জনতা এ সময় এক মানববন্ধন করে ডাক্তার নজরুল ইসলামের ক্লিনিক বন্ধ ও তার বিরুদ্ধে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
গত ১২ ফেব্রয়ারি কেশবপুরের দেওলী গ্রামের কালাম মোল্যার স্ত্রী রেকসোনা (২০) সিজার করার পর মারা যান। ডাক্তার দীলিপ রায় ও তার স্ত্রী ডাক্তার অঞ্জলী রায় কেশবপুর কপোতাক্ষ সার্জিক্যাল ক্লিনিকে তার সিজার করেন। কেশবপুরের ছয়টি ক্লিনিকে অপারেশনের পর এমনভাবে প্রায়ই রোগি মারা যাচ্ছে। ক্লিনিকগুলোতে ঘনঘন রোগি মারা যাবার কারন জানাতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাক্তার শেখ আবু শাহিন জানান, যোগ্যতা সম্পন্ন ডাক্তার দিয়ে অপারেশন না করা, প্রশাসনের সঠিক মনিটরিং না হওয়া এবং অপারেশনের পর রোগির সঠিক তদারকি না করায় রোগির মৃত্যু ঘটছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ রায়হান কবির জানান, ভুল অপারেশনের রোগি মারা গেলে সেখানে প্রশাসনের কোন হাত নেই। মূলত সিভিল সার্জনই এ সব ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখতে পারেন। সঠিকভাবে ক্লিনিক ব্যবস্থাপনার দেখভাল সিভিল সার্জনই করেন।
এদিকে প্রতিটা রোগি মারা যাবার পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কিছু কৌশল নিয়ে থাকে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন, কোন রোগি মারা যাবার আগে বা পরে তারা রোগিকে খুলনা বা যশোর রেফার করে দেয়। নিহতের লোকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে স্ট্যাম্পে যা খুশি লিখে না দাবির স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এর জন্য তাদের মাস্তান, পুলিশ ও কিছু কিছু সাংবাদিকদের মোটা টাকা দিয়ে বুঝ করতে হয় একটি সুত্র থেকে জানা গেছে। ওই সূত্র জানিয়েছে নিহত জেসমিন প্যাকেজেও প্রায় তিন লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।